বিয়ে নিয়েও প্রতারণার ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। অনেক সময় দুজন ছেলেমেয়ে নিজেদের ইচ্ছায় বিয়ে করেন। বিয়ের কথা পরিবারের কাউকে জানান না। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই ছেলে বা মেয়ে বিয়ের কথা গোপন রেখে অন্য কোথাও পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী বিয়ে করে ফেলেন। আবার দেখা যায় দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক কোনো কারণে ভেঙে গেলে কোনো পক্ষ ভুয়া কাবিননামা তৈরি করে স্বামী বা স্ত্রী হিসেবে দাবি করতে থাকে। আবার এমনও দেখা যায় আদৌ বিয়ে হয়নি অথচ বিয়ে হয়েছে, এ বলে মিথ্যা প্রমাণ দেখিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মতো সংসার করতে থাকেন। মেয়েটিকে আর ভালো না লাগলে কিংবা মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়লে ছেলেটি বিয়ে অস্বীকার করতে থাকে। এ ধরনের ঘটনাগুলোই বিয়ে-সংক্রান্ত অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। বিয়ে নিয়ে যদি প্রতারণা বা অন্য কোনো অপরাধ ঘটে তাহলে এর কি কোনো প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ আছে? অবশ্যই আছে। দণ্ডবিধি আইনে বিয়ে-সংক্রান্ত অপরাধের কঠিন শাস্তির বিধান করা হয়েছে।
ADVOCATE MOHAMMAD ASIF
Assala-mu-alaikum to Everyone. Welcome to the official blog page of Advocate Md. Asif Rabbi
রবিবার, ১ আগস্ট, ২০২১
বিয়ে সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধ, প্রতিকার ও সাজা
বুধবার, ৩০ জুন, ২০২১
জমি কেনার আগে জেনে নিন ১০ টি জরুরী বিষয়
ভূমির মালিকানা সম্পর্কে সুনিশ্চিত হওয়া অনেক কঠিন ব্যাপার বটে। ভূমি ক্রেতাগন মুন্সি মোহরি ও দালালের শরণাপন্ন কিংবা খপ্পরে পড়ে নিজের সর্বনাশ করছেন এমন উদাহরণ অনেক। ভেজাল জমি কিনে একদিকে যেমন সারা জীবনের সঞ্চয় হারাতে হয় তেমনি মামলা মোকদ্দমার সাথে সংযুক্ত হতে হয়। এজন্য জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতারা নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উপর জোর দিতে পারেন-
- যার কাছ থেকে জমি কিনবেন তার কাছ থেকে ঐ জমি সংক্রান্ত সকল কাগজপত্রের ফটোকপি চেয়ে নিন, যেমন- সি.এস খতিয়ান, আর.এস খতিয়ান, বি.এস/ঢাকা সিটি জরীপের খতিয়ানসহ সর্বশেষ পর্যন্ত যে সকল বেচাকেনা হয়েছে সেগুলোর বায়া দলিল, নামজরী খতিয়ান এবং হাল সনের খাজনার দাখিলাসহ সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্র।
- এ কাগজগুলো দিয়ে মালিকানা স্বত্ত্ব পরিক্ষা করে দেখতে হবে। যেমন- সি.এস খতিয়ান, এস.এ খতিয়ান, আর.এস/বি.এস খতিয়ান ও ঢাকা সিটি জরীপের খতিয়ান পাশাপাশি মিলিয়ে দেখতে হবে জেলা, মৌজা, থানা, দাগ নম্বর ইত্যাদি মিলে কিনা। যদি না মিলে তবে ঐ মৌজার সি.এস নকশা,আর.এস./বি.এস ও ঢাকা সিটি জরীপের নকশা জোগাড় করে তাদের তুলনা করে দেখতে হবে সি.এস দাগ ভেঙে কয়টি আর.এস. দাগ বা সিটি জরীপের দাগ সৃষ্টি হয়েছে এবং সেগুলো কি কি। এরপর ভূমি রেকর্ড রুম হতে ঐ খতিয়ানগুলোর সই মুহুরী নকল নিয়ে মালিকের নাম নিশ্চিত করতে হবে। যদি সি.এস খতিয়ানে মালিকের নামের সহিত এস.এ বা আর.এস খতিয়ানের মিল না পাওয়া যায় তবে দেখতে হবে সি.এস এর মালিক জমিটি কি করলেন। তিনি যদি বিক্রি, দান, হেবা, এওয়াজ বা কোনরূপ হস্তান্তর করে থাকেন তবে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে তল্লাশি দিতে হবে এবং হস্তান্তর দলিলের সই মুহুরী নকল বের করতে হবে। একইভাবে পরবর্তী সকল খতিয়ানের মালিকানার ক্ষেত্রে তা পরিক্ষা করতে হবে। কিভাবে হস্তান্তরিত হয়ে রেকর্ড প্রস্তুত হয়েছে।
- বিক্রেতার জমিটি তার অন্যান্য শরীকদের সঙ্গে অংশনামা হয়েছে কিনা তা দেখতে হবে। বিক্রেতা যদি বলেন যে আপোষমুলে বণ্টন হয়েছে, কিন্তু না রেজিস্ট্রি হয়নি, তবে ফারায়েজ অনুযায়ী বিক্রেতা যেটুকু অংশের দাবিদার শুধু সেটুকু কিনাই নিরাপদ হবে।
- বিক্রেতা যদি তার কিনা জমি বিক্রি করতে চান তবে রেকর্ডীয় মালিক থেকে পরবর্তীতে হস্তান্তরিত সকল বায়া দলিলসমুহে বর্ণিত স্বত্ব ঠিক আছে কিনা তা দেখতে হবে। ঐ দলিলে বর্ণিত খতিয়ান ও দাগ নম্বর বের করে তাও বিশ্লেষন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিস ও ভূমি অফিস থেকে সই মুহুরী নকল নিয়ে তা যাচাই করতে হবে।
- যাচাই করতে হবে জমিটি খাস, পরিত্যক্ত, শত্রু স¤পত্তি কিনা বা সরকার কোন কারনে অধিগ্রহণ করেছে কিনা।
- জমি বিক্রেতার মালিকানা স্বত্ব বা বিক্রয়ের বৈধ অধিকার আছে কিনা তা দেখতে হবে। অর্থাৎ জমির মালিক নাবালক বা অপ্রকৃতিস্থ কিনা লক্ষ্য রাখতে হবে। নাবালক হলে আদালতের মাধ্যমে অভিভাবক নিযুক্ত করে বিক্রয়ের অনুমতি নিতে হবে।
- কিনার আগে সব অংশীদারকে নোটিশ দিতে হবে যাতে পরবর্তীতে অগ্রক্রয়/প্রিয়েমশান মোকদ্দমা হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে।
- এবার দেখতে হবে বিক্রেতা ঐ জমির ব্যাপারে কাউকে আমমোক্তার নিযুক্ত করেছেন কিনা, এছাড়া ব্যাংক কিংবা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে বন্ধক রেখেছেন কিনা। আর উক্ত জমিটি নিয়ে কোন মামলা বিচারাধীন আছে কিনা কিংবা কোন প্রকার মামলা নিস্পত্তি হয়েছে আছে কিনা তা দেখাও বাঞ্ছনীয়।
- জমির মালিকানা স্বত্ব সঠিক পাওয়ার পর আপনাকে সি.এস/আর.এস/বি.এস/ঢাকা সিটি জরীপের নকশা নিয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখতে হবে নকশা অনুযায়ী ঐ জমিটি সেই দাগের কিনা।
- এরপর বিক্রয়ের জন্য নির্দিষ্ট জমিটি বর্তমানে কে দখলে আছে, কিনতে গেলে কোন কারনে ভোগ দখলে বাধাগ্রস্থ হবে কিনা কিংবা রাস্তা বা পথাধিকারের কোন বাধা নিষেধ আছে কিনা তাও সরেজমিনে যাচাই করে নিতে হবে।
সবকিছু সঠিক পাওয়া গেলে তারপর রেজিস্ট্রি করার জন্য দলিল প্রস্তুত করতে হবে। দলিল লিখার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। ২০০৫ সালের জুলাই থেকে আর আগের মত গদ্যাকারে বর্ণনামূলক দলিল প্রস্তুত করা হয়না। নতুন আইনে ছকাকারে যেভাবে কলামগুলো পূরণ করতে হয় সেগুলোর প্রতিটি কলাম সঠিক জেনে পূরণ করা উচিত।
এক্ষেত্রে ভূমি আইন, হেবা আইন, রেজিস্ট্রেশন আইন জানা লোকদের দিয়ে দলিল প্রস্তুত করাই উত্তম। দলিল রেজিস্ট্রির সময় রেজিস্ট্রি অফিসের সত্যায়িত এক কপি সহমুহুরী নকল নিজের কাছে রেখে দিন এবং সময়মত মূল দলিল উঠিয়ে নিন।
আইনের দৃষ্টিতে "বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ" ও আইনগত ব্যাখ্যা
আইনি আলোচনা :
বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে যেতে হলে আমাদের শুরুতেই দেখতে হবে ধর্ষণের সংজ্ঞা। কারণ, এখানে ধর্ষণকে প্রধান অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, এবং ধর্ষণের ক্ষেত্রে অভিযোগকারীনির সম্মতি আদায় করা হয়েছে বিয়ের প্রলোভনে। অর্থাৎ, বিয়ের প্রলোভন এখানে সম্মতি আদায়ের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক।
ধর্ষণের সংজ্ঞা :
দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩৭৫ ধারায় ‘ধর্ষণ’কে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী পাঁচটি অবস্থায় যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে তা ধর্ষণ হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে –
১। নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ;
২। নারীর সম্মতি ছাড়া ;
৩। মৃত্যু কিংবা জখমের ভয় দেখিয়ে নারীর সম্মতি নিয়ে ;
৪। নারীর সম্মতি নিয়েই, কিন্তু পুরুষটি জানে যে সে ঐ নারীর স্বামী নয় এবং ঐ নারীটি তাকে এমন একজন পুরুষ বলে ভুল করেছে যে পুরুষটির সাথে তার আইনসঙ্গতভাবে বিয়ে হয়েছে বা বিবাহিত বলে সে বিশ্বাস করে ;
৫। নারীর সম্মতিসহ বা সম্মতিছাড়া যদি সে-নারীর বয়স ১৪ বছরের কম হয়।
এখন, বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের বিষয়টি বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেখানে অভিযুক্ত ব্যক্তি বিয়ের প্রলোভনে নারীর সম্মতি আদায় করেছে যা ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের শর্তের অন্তভুক্ত না। ফলত, ৩৭৫ ধারায় প্রদত্ত সংজ্ঞার সরল বিশ্লেষণে স্পষ্টত যে, বিয়ের প্রলোভনে যৌন সম্পর্ক স্থাপন ধর্ষণ হিসেবে সংজ্ঞায়িত হবে না।
অন্যদিকে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ২(ঙ) ধারায় বলা হয়েছে, “ধর্ষণ” অর্থ ধারা ৯ এর বিধান সাপেক্ষে, Penal Code, ১৮৬০ (Act XLV of ১৮৬০) এর Section ৩৭৫ এ সংজ্ঞায়িত “rape”;
অর্থাৎ, দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৩৭৫ ধারায় প্রদত্ত ধর্ষণের সংজ্ঞা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহা হলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
ব্যাখ্যা— যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ছাড়া ষোল বছরের অধিক বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতি ছাড়া বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে অথবা ষোল বছরের কম বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ছাড়া যৌন সঙ্গম করে তা হলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবে।
এই ধারাও সম্মতি নিয়ে দৈহিক সম্পর্ক হলে তা অপরাধ হিসেবে গন্য হবে না তবে বয়স হতে হবে ষোলো বছরের বেশি। তবে ব্যাখ্যা অংশের একটি বিষয় এখানে উল্লেখ্য, বলা হয়েছে— প্রতারণামূলকভাবে যদি সম্মতি আদায় করা হয়। বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ মূলত এই বিধানের বিপরীতে দায়ের করা হয়।
লক্ষ্য করার বিষয়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৯(১) ধারার ব্যাখ্যা অংশে বলা হয়েছে, প্রতারণার মাধ্যমে যদি ষোল বছরের অধিক কোনো নারীর সম্মতি আদায় করে যৌন সংঙ্গম করা হয় তা ধর্ষণ বলে গণ্য হবে। কিন্তু, আইনটির ২ ধারার সংজ্ঞায় ক-ঠ পর্যন্ত বা অন্য ধারাগুলোতেও প্রতারণার কোনো সংজ্ঞা প্রদান করা হয়নি। মূলত, আইনের এই দুর্বলতার কারণে আইনটির অপপ্রয়োগের সুযোগ যেমন সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি অনেকে আবার ন্যায় বিচার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
তবে এক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন মনে আসতেই পারে যে, বিয়ের প্রলোভনে সম্মতি আদায় কোনো বৈধ চুক্তি হতে পারে কিনা? সেক্ষেত্রে ধর্ষণ না হয়ে চুক্তিভংঙ্গের মামলা দায়েরের কোনো সুযোগ রয়েছে কিনা? আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে আপাতত না। কারণ, মুসলিম শরীয়াহ আইনের বিধানানুযায়ী, ভবিষ্যতে বিবাহের প্রতিশ্রুতি সংক্রান্ত কোনো মৌখিক চুক্তি অনুমোদিত না। উপরন্তু, বিবাহের চুক্তি সর্বদা লিখিত ও নিবন্ধিত হতে হবে। তথাপি, চুক্তি আইন ১৮৭২ এর ২(জ) ধারানুযায়ী, যেকোনো সম্মতি বা কোনো বিষয়ে কথা দিলেই তা চুক্তিতে রূপান্তর হয় না যতক্ষণ না পর্যন্ত সম্মতিটি আইন দ্বারা বলবৎযোগ্য হয়।
প্রক্ষান্তরে, বিয়ের প্রলোভনে সম্মতি আদায় প্রতারণা হতে পারে কিনা? যদি হয়, তবে সেক্ষেত্রে আইনে এটার আলাদা ব্যাখ্যা এবং আলাদা শাস্তির বিধান থাকা উচিত।
অন্যদিকে, দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪৯৩ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নারীকে প্রতারণামূলকভাবে আইনসম্মত বিবাহিত বলে বিশ্বাস করান, কিন্তু আদৌ ওই বিয়ে আইনসম্মতভাবে না হয় এবং ওই নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন, তবে অপরাধী সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে। এই ধারাটি মূলত বিয়ে বলবৎ আছে বিশ্বাস করিয়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অতএব, এই ধারায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বা ভবিষ্যতে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে দৈহিক সম্পর্ক করলে তা অপরাধ হবে না।
রীট কী (What is Writ)? রিটের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ
ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯১ ধারায় হাইকোর্ট বিভাগে হেবিয়াস কপার্স জাতীয় নির্দেশ দানের ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হইয়াছে। হেবিয়ার্স কপার্স, রিট-অব মেন্ডামার্স প্রভৃতি প্রকারের রীট হইতে পারে।